বৈজ্ঞানিক নাম (Cinnamomus Zeylanicum) যাকে বলা হয় দারুচিনি। দারুচিনিকে ইংরেজীতে বলা হয় Cinnamon. দারুচিনি হলো এক ধরণের মশলা। সাধারণত রান্নাতে এক ধরণের মশলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। দারুচিনি গাছ দেখতে অনেকটা তেজপাতা গাছের মতো হয়। এবং প্রায় ১০ থেকে ১৫মিটার লম্বা হয়। এই দারুচিনি গাছের ছালকে মশলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তবে দারুচিনি ও মশলা হিসেবে বহুল প্রচলিত। দারুচিনির তেল ও পাওয়া যায়। প্রথমদিকে শ্রীলংকাতে এই দারুচিনি গাছের উৎপাদন বেশি হতো। বর্তমানে ভারত, বাংলাদেরশ ও চীনের এই গাছের উৎপাদন হয়ে থাকে। তবে এই মশলা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যেও বিশেষভাবে কাজ করে।
আসুন জেনে নিই দারুচিনি আমাদের জন্যে কীভাবে উপকারি হিসেবে কাজ করে।
১।আমরা গ্রামে কিংবা শহরে যারা বসবাস করি কমবেশি সকলেই দারুচিনি চিনি। রান্নায় দারুচিনি ব্যবহার করা হয়। ফিরনি,পায়েস,সেমাই রান্না করার সময় স্বাদ বাড়ানোর জন্যে আমরা দারুচিনি ব্যবহার করি। এছাড়া গোশত রান্নার ক্ষেত্রেও আমরা দারুচিনি ব্যবহার করে থাকি।
২।যাদের দাঁতের সমস্যা আছে অর্থাৎ দাঁতের গোড় নরম আরো বিভিন্ন উপসর্গ তারা যদি দারুচিনির গুড়া দাঁতের সেই জায়গায় লাগিয়ে রাখে এতে ব্যাথা কমতে পারে। এছাড়া ৩ বা ৪ গ্রাম দারুচিনির গুড়া এক কাপ হাল্কা গরম পানিতে ক্ষানিক্ষন ভিজিয়ে রেখে সেই পানি ছেঁকে ৫ থেকে ৭ মিনিট মুখে রাখলে অনল উপকার হয়।
৩।বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের রক্তে সুগারের পরিমাণ বেশি তারা দারুচিনি সেবন করতে পারে। দারুচিনি রক্তে সুগারের পরিমাণ কমিয়ে আনে। অর্থাৎ ডায়াবেটিস রোগীরা দারুচিনি খেতে পারেন।
৪।দারুচিনি ক্যান্সার, গ্যাস্ট্রিক আলসার, টিউমার, মেলানমাস সহ আরো বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে। কেননা এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এই সকল রোগ থেকে আমাদের দূরে রাখে।
৫।যাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হয় তারা দারুচিনি খেতে পারেন। দারুচিনি খেলে রক্ত তরল হয় এবং রক্ত সঞ্চানল বৃদ্ধি পায় রক্তের উন্নতি করে। এতে আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণ ও সহজ হয়ে যায়।
৬।মাথা ব্যাথার যাদের সমস্যা রয়েছে তারা অনেকেই চা খেতে পছন্দ করেন। তারা চাইলে চায়ের সাথে কয়েকটি দারুচিনি দিয়ে খেতে পারেন এতে মাথা ব্যাথা থেকে তাড়াতাড়ি উপশম পাওয়া যায়।
৭।পুষ্টিতালিকায় আমরা যদি দারুচিনি রাখি তাহোলে আমাদের বিভিন্ন পুষ্টিগুণ বেড়ে যাবে। দারুচিনিতে আছে আমিষ, শ্বেতসার, চর্বি, ভিটামিন বি ১, ভিটামিন বি ২, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, লৌহ, ক্যারেটিন, খাদ্যশক্তি সবগুলা উপাদান সমান পরিমাণে থাকে। ১০০গ্রাম দারুচিনি নিলে এইসকল পুষ্টিউপাদান গুলাকে সমানভাগে ভাগ করা থাকে।
৮।আমাদের অনেক সময় অতিরিক্ত কাশিতে কিংবা ভোকাল কোনো সমস্যা হলে অর্থাৎ কন্ঠস্বর এর বিকৃতি হলে সাময়িকভাবে আমাদের আওয়াজ অন্যরকম হয়ে যায়। ১গ্রাম দারুচিনিকে থেঁতো করে আধাকাপ গরম পানতে সারারাত ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে সেটাকে ছেঁকে খেয়ে নিলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
৯।দারুচিনির যে একটা আলাদা সুঘ্রাণ রয়েছে তা আমাদের স্মৃতিশক্তিকে আরো তীব্র করে। তাই নিয়মিত দারুচিনি ক্ষেতে পারেন। এতে স্মৃতিশক্তি প্রখর হয়। বাতের ব্যাথা এমনকি শরীরের ব্যাথায় আমরা দারুচিনির সাথে সরিষার তেল মিশ্রণ করে ম্যাসাজ করতে পারি।এছাড়া ১চামচ মধুর সাথে আধা চামচ দারুচিনির গুড়া মিশিয়ে সকালের নাস্তায় খেতে পারি।
১০।দারুচিনিতে রয়েছে সবচেয়ে বেশি পরিমানে রয়েছে পলিফেনল এন্টিঅক্সিডেন্টস। তাই একে বলা হয় সুপার ফুডস। এছাড়া এই দারুচিনি খাবারে ব্যবহার করলে খাবার দীর্ঘক্ষণ পর্যন্ত সংরক্ষন করে রাখা যায়। এছাড়া এই দারুচিনি শরীর থেকে ক্ষতিকর ভাইরাসকে দূরে রাখে। প্রত্যেকদিন যদি অল্প পরিমাণে দারুচিনি খাওয়া যায় তাহোলে আমাদের শরীরে যে অপ্রোয়জনীয় ভাইরাস বাসা বাঁধে তা আর বাসা বাঁধতে পারেনা।
উপরোক্ত পদ্ধতিগুলোতে আমরা দারুচিনির বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে জানলাম। দারুচিনি আমাদের নিত্যদিনে বিভিন্ন ধরণের সমস্যা থেকে দূরে রাখে। তাই নিয়মিত এবং পরিমাণমতো দারুচিনি খাওয়া যেতে পারে।