হাত এবং পা আমাদের শরীরের প্রধান অঙ্গ গুলোর মধ্যে অন্যতম । দৈনন্দিন প্রায় সব ধরনের স্বাভাবিক কাজকর্মে হাত এবং পায়ের উপরে চাপ বেশি পড়ে । ফলে আমাদের হাত-পায়ের ত্বক শুষ্ক, রুক্ষ এবং বিবর্ণ ও মলিন হয়ে পড়ে। যার ফলে আমাদের হাত-পায়ের ত্বক স্বাভাবিক ভাবে কোমলতা হারায়।হাত পায়ের ত্বক কোমল ও মসৃণ রাখার উপায়
প্রতিদিন রোদে, সূর্যের তাপে এবং বিভিন্ন কেমিক্যাল আমাদের হাত-পায়ের সংস্পর্শে এসে আমাদের হাত-পায়ের ত্বক কে আরো রুক্ষ এবং কঠিন করে দেয়। যার জন্য আমাদের হাত-পায়ের ত্বক কোমল এবং মসৃণ রাখতে একটু বাড়তি যত্নের প্রয়োজন হয়। তা না হলে আমাদের হাত পায়ের ত্বক এবং চেহারার ত্বকের সাদৃশ্য সম্পূর্ণরূপে হারিয়ে যায়। যে কারোর জন্য মোটেও কাম্য নয়।
তাই সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে কিভাবে ঘরে বসে হাত-পায়ের ত্বক কোমল এবং মসৃণ ও আকর্ষণীয় রাখবেন তার বিস্তারিত বর্ননা নিয়ে আমাদের এই আলোচনাটি সাজানো হয়েছে। তাহলে চলুন বন্ধুরা দেখে নেয়া যাক কিভাবে সব সময় নিজেদের হাত-পায়ের ত্বক কোমল এবং মসৃণ রাখবেন তার অত্যন্ত কার্যকরী কিছু কৌশল।হাত পায়ের ত্বক কোমল ও মসৃণ রাখার উপায়
সব সময় হাত পায়ের ত্বক কোমল রাখার কার্যকরী উপায় সমূহঃ
পেডিকিউর এবং মেনিকিউরঃ
হাত-পায়ের ত্বককে কোমল এবং মসৃণ রাখতে পেডিকিউর এবং ম্যানিকিউর অন্যতম প্রধান এবং গুরুত্বপূর্ণ কৌশল গুলোর মধ্যে একটি। বিভিন্ন বিউটিশিয়ানরা এবং গবেষকেরা হাত এবং পায়ের ত্বকের যত্নে পেডিকিউর মেনিকিউর করার পরামর্শ দিয়ে আসছেন। মাসে অন্তত এক থেকে দু’বার পেডিকিওর-মেনিকিওর করে আপনার ত্বক থাকবে উজ্জ্বল, ফর্সা, কোমল এবং মসৃণ। হাত-পায়ের ত্বক কোমল ও মসৃণ রাখতে পার্লারে গিয়ে কিংবা ঘরে বসেই পেডিকিউর মেনিকিউর করা যায়।পেডিকিওর-মেনিকিওর ত্বককে হাত-পায়ের ত্বক উজ্জ্বল, ফর্সা এবং আকর্ষনীয় করে তুলতে সাহায্য করে।
তাই সব সময় হাত-পায়ের ত্বক কোমল রাখার জন্য মাসে অন্তত দুবার পেডিকিউর এবং মেনিকিউর করবেন।
বিঃদ্রঃ
ঘরে বসে প্রাকৃতিক উপায়ে কিভাবে পেডিকিওর-মেনিকিওর করা যায় তার বিস্তারিত জানতে আমাদের পেডিকিওর-মেনিকিওর সংবলিত কলামটি পড়ুন।
তেল এবং চিনির মিশ্রণঃ
বিঃদ্রঃ তেলের ক্ষেত্রে অপরিশোধিত নারিকেল তেল অলিভ অয়েল বা আমন্ড অয়েল হলে ভালো হয়।
1 টেবিল-চামচ অপরিশোধিত তেল, তাতে 2 চা-চামচ চিনি নিয়ে আমাদের ত্বকে চিনি মিহি হয়ে যাওয়া পর্যন্ত ভালোভাবে ঘষে নিতে হবে।
দুই থেকে তিন মিনিট ভালোভাবে ঘোষণার পর কুসুম গরম জলে হাত-পায়ের ত্বক ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
সপ্তাহে দু’বার এই পদ্ধতিটি হাত-পায়ের ত্বকের এপ্লাই করলে। অতি দ্রুত সময়ে হাত-পায়ের ত্বক কোমল এবং মসৃণ হয়ে উঠবে।
অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারীঃ
সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদান এলোভেরাতে রয়েছে ত্বক কোমল এবং মসৃণ ও নরম করার অনন্য প্রাকৃতিক গুণাবলী।
একটি সবুজ অ্যালোভেরার পাতা কেটে নিয়ে অ্যালোভেরা জেল বের করে নিন।
অ্যালোভেরার জেল হাত এবং পায়ের ত্বকে ভালোভাবে মালিশ করে নিন।
এলোভেরা জেল এর সাথে বিভিন্ন উপাদান যেমন মধু, লেবুর রস, চিনি, ও আমন্ড অয়েল ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন।
এলোভেরা হাত-পায়ের ত্বকের মালিশ করার বীজ থেকে 25 মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে হাত-পায়ের ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন।
হাত-পায়ের ত্বক কোমল রাখতে এলোভেরা অত্যন্ত কার্যকরী।
এলোভেরা আমাদের হাত-পায়ের ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা ধরে রেখে ত্বককে শুষ্ক হতে দেয় না।
ত্বকের মৃত কোষ সমূহ দূর করে নতুন কোষ জন্মাতে এবং সজীব রাখতে সাহায্য করে।
আপনার ত্বকের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক সমূহ দূর করে ত্বক দূষণমুক্ত রাখে।
তাই আমাদের হাত-পায়ের ত্বক কোমল রাখতে সপ্তাহে অন্তত তিন থেকে চারবার এলোভেরা ঘৃতকুমারি ব্যবহার করুন।
মধুঃ
হাত-পায়ের ত্বক কোমল এবং মসৃণ রাখতে প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে অত্যন্ত কার্যকরী।
মধু আমাদের ত্বককে টানটান রাখে ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা ধরে রাখে।
মধুর সাথে গ্লিসারিন অথবা লেবুর রস মিশিয়ে নিয়ে হাত এবং পায়ের ত্বকে ভালোভাবে মালিশ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
দিনে অন্তত একবার এই পদ্ধতিতে মধু আপনার হাতে পায়ের ত্বকে মালিশ করলে অতি দ্রুত সময়ে আপনার ত্বক মসৃণ, কোমল, উজ্জ্বল এবং ফর্সা হয়ে উঠবে।
ভ্যাসলিনঃ
আমাদের ত্বককে নরম কোমল এবং মসৃণ রাখতে ভ্যাসলিন অত্যন্ত কার্যকরী উপাদান।
শুষ্কতা থেকেই আমাদের ত্বক সাধারণত মলিন, বিবর্ণ এবং রুক্ষ হয়ে ওঠে।
তাই প্রতিদিন রাতে শুতে যাওয়ার পূর্বে মোটা স্তর করে হাত পায়ের ত্বকে ভ্যাসলিন লাগিয়ে নিন।
তিন থেকে পাঁচ মিনিট ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন।
তারপর হ্যান্ডগ্লাভস এবং পায়ের মোজা পরে শুয়ে যান।
নিয়মিত এই পদ্ধতি ব্যবহারে আপনার হাত-পায়ের ত্বক অতিদ্রুত কোমল, উজ্জ্বল, মসৃণ এবং ফর্সা হয়ে উঠবে।
চন্দন পাউডারঃ
রূপচর্চায় চন্দন পাউডার অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপাদান। এইতো উপাদানটি ত্বক কে গভীরে থেকে উজ্জ্বল মসৃণ ও কোমল এবং ফর্সা করে তুলে।
ঠিক তেমনি হাত এবং পায়ের ত্বকে চন্দন পাউডার ব্যবহার করলে আপনাদের ত্বক সুস্থ, সুন্দর, কোমল এবং মসৃণ হয়ে উঠবে।
2 চা চামচ চন্দন পাউডার এর সাথে পরিমাণমতো গোলাপজল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন।
তারপর হাত এবং পায়ের ত্বকে ভালোভাবে স্ক্রাব করে লাগিয়ে নিন।
3 থেকে 5 মিনিট ম্যাসাজ করার পর 15 থেকে 20 মিনিট শুকানোর জন্য সময় দিন।
তারপর কুসুম গরম জলে হাত-পায়ের ত্বক ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
নিয়মিত চন্দন পাউডার আপনার হাত পায়ের ত্বকে ব্যবহার করলে দ্রুত সময়ে হাত পায়ের ত্বক উজ্জ্বল, ফর্সা, কোমল ও মসৃন হয়ে উঠবে।
হাত-পায়ের ত্বক কোমল ও মসৃণ রাখতে কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয়ঃ
হাত পায়ের ত্বক কোমল ও মসৃণ রাখার উপায়
সূর্যের তাপে বের হওয়ার সময় ফুলহাতা শার্ট এবং স্নিকার্স পড়ে যাবেন।
বাহিরের ধুলাবালি থেকে এসেই প্রথমে হাত-পায়ের ত্বক ভালোভাবে ধুয়ে নিবেন।
হাত-পায়ের ত্বকের ময়লা জমতে দিবেন না।
হাতের ত্বক সব সময় পরিষ্কার রাখুন।
হাত পায়ের ত্বকে অতিরিক্ত সাবান এবং কেমিক্যাল এর ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ
উপরে উল্লেখিত বিভিন্ন উপায় এবং উপাদান আপনার ত্বকের জন্য এলার্জি হলে তা ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
সব সময় সুস্থ সুন্দর কোমল এবং মসৃণ হাত-পায়ের ত্বকের যত্নে উপরে উল্লেখিত পদ্ধতিসমূহ সপ্তাহে অন্তত দুবার ব্যবহার করুন।
বিভিন্ন মিশ্রণে তৈরি প্যাক সমূহ ব্যবহার করে রোদে, গরম স্থানে এবং ধুলাবালি যুক্ত স্থানে যাবেন না।
শুষ্ক রুক্ষ হাত-পায়ের ত্বক কারোরই কাম্য নয়। তাই হাত-পায়ের ত্বক কোমল রাখতে উপরে উল্লেখিত নির্দেশনা সমূহ মেনে চলুন। হয়ে উঠুন কোমল মসৃণ এবং আকর্ষণীয় হাত-পায়ের ত্বকের অধিকারী।
ধন্যবাদ