সাধারণত শুকনা আঙ্গুরকেই কিসমিস বলা হয়। বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই কিসমিস উৎপাদিত হয় এবং শক্তি বর্ধক ও ক্যালরির উৎস হিসেবে খুব ভালো ব্যবহার করা হয় কেননা এটি সরাসরি খাওয়া যায়। আর কিসমিস কে বলা হয় শুকনো ফলের রাজা।
এই কিসমিস ইরাক, ইরান, পাকিস্তান ও ভারতে বেশি জন্মে থাকে। আমরা রান্নার স্বাদ দ্বিগুন করার জন্যে এবং খাবার পরিবেশনের জন্যেও অনেক সময় কিসমিস ব্যবহার করে থাকি। সাধারণত আঙ্গুরকে শুকিয়ে কিসমিস তৈরি করা হয়।
কিসমিস তৈরি করতে প্রয়োজন সূর্যের তাপ কিংবা মাইক্রোওয়েভ ওভেন। আঙ্গুরের ফ্রুকটোজগুলো তাপে গরম হয়ে জমাট বেঁধে কিসমিসে পরিণত হয়।
আসুন জেনে নিই কীভাবে কিসমিস খাবো এবং কিসমিস খাওয়ার উপাকারিতা কিঃ
১।খাবারের স্বাদ বাড়ায় ও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারীঃ
আমরা বাঙ্গালিরা খুবই খাদ্য রসিক মানুষ। খাবারকে নানাভাবে সাজিয়ে খেতে খুব ভালোবাসি। আমরা মিষ্টান্ন হিসেবে পায়েস,পোলাও,কোরমা রান্না করে থাকি। এবং বিভিন্ন ভাবে পরিবেশন করি।
এতে যদি কয়েকটি কিসমিস দেয়া হয় তাহোলে স্বাদটা আরো দ্বিগুণ হয়ে যাবে। এই ছোট শুকনো ফল আপনাকে শুধু স্বাদ দিবেনা বরং আপনার স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী ও হবে।
২ । রক্তস্বল্পতা দূর করেঃ
অনেক মহিলাদের রক্তস্বল্পতার সমস্যা রয়েছে তারা চাইলে কিসমিস ভিজিয়ে পানি খেতে পারেন। কেননা কিসমিসে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট। তাই ডাক্তারেরা কিসমিস ভেজানো পানি খাওয়ার পরামর্শ দেন। কেননা এতে লিভার ও কিডনির সমস্যা ও দূরিভূত হয়।
৩। হজমের ও পেটের সমস্যা দূর করেঃ
ভেজানো কিসমিসের পানির আরো উপকারীতে রয়েছে। যাদের হজমের ও পেটের সমস্যা রয়েছে তারা এই কিসমিস ভেজানো পানি খেলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। এছাড়াও ভেজানো কিসমিসে থাকে পটাশিয়াম যা হার্টকে ভালো রাখে ও কোলেস্টেরল এর সমস্যা থেকে দূরে রাখে।
৪।ওজন নিয়ন্ত্রণ করেঃ
আমরা যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে ডায়েট করি তারা বিকালের নাস্তা সাধারণত ড্রাই ফ্রুটস খেয়ে থাকি। এতে অন্যান্য ড্রাই ফ্রুটস এর সাথে কিসমিস ও মেশানো থাকে। কিসমিসে রয়েছে পটাশিয়াম, কার্বোহাইড্রেট, ফ্রুক্টোজ ইত্যাদি। অন্যান্য খাদ্য পুষ্টিগুণের সাথে কিসমিস ও তার খাদ্য গুণাগুণ বজায় রাখে।
৫। আয়রনের ঘাটতি পূরণ করেঃ
এই কিসমিস বিশেষ করে মহিলাদের জন্যে খুবই উপোযোগী। কারণ মহিলাদের বিশেষ কিছু খাদ্য উপাদানের ঘাটতি থাকে আয়রন, রক্তস্বল্পতা। এই কিসমিসের ভেজানো পানি নিয়মিত খেলে আমাদের রক্তসঞ্চালনের যেসকল সমস্যা রয়েছে যেমন পেশি সংকুচিত হয়ে যাওয়া সেই সকল সমস্যা থেকেও সমাধান পাওয়া যায়।
৬।সৌন্দর্য রক্ষার্থেঃ
শুধু খাবারের সৌন্দর্য রক্ষার্থে কিসমিস না আমাদের দৈনন্দিন পুষ্টি গুণের ঘাটতি রক্ষার্থে ও এই কিসমিসের ভূমিকা অনেক। এছাড়া যারা শুধু কিসমিস খেতে পারেন না তারা চাইলে কাজুবাদাম দিয়ে খেতে পারেন। এতে আপনার শরীরে পুষ্টিগুণাগুণ ও সঠিক থাকলো।
৭। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দূর করেঃ
যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে অর্থাৎ রক্তে সোডিয়ামের পরিমাণ যখন বেড়ে যায় তখন উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দেয়। এই কিসমিস নিয়মিত খেলে তা ধীরে ধীরে রক্তে সোডিয়ামের পরিমাণ কমায়। এতে রক্তচাপের সমস্যা থেকে ও মুক্তি পাওয়া যায়।
কিসমিসের পুষ্টিগুণঃ
কিসমিসের ওজন অনুযায়ী তার কিছু নির্দিষ্ট খাদ্য উপাদান রয়েছে। যেমন এতে প্রোটিন রয়েছে ৩%, ডায়েট ফাইবার রয়েছে ৩.৭%–৬.৮%, শর্করা রয়েছে ৭২%, আর বেশিরভাগই হলো ফ্রুক্টোজ। তাই কিসমিস আমাদের নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখতে পারি।
কিসমিস খাওয়ার সঠিক নিয়মঃ
উপরোক্ত নিয়মাবলী ও উপকারিতা থেকে আমরা জানলাম ভেজানো কিসমিস খাওয়ার গুরুত্ব। একে ভেজানো হয় কেননা এটি একটি চুপসানো শুকনো ফল। এটি সোনালী বাদামী রঙের হয়ে চুপসে থাকে। তাই রাতে ২কাপ পানি কয়েকট কিসমিস দিয়ে সারারাত ভিজিয়ে রাখবেন, দেখবেন এর রঙ গাঢ় হবে আর যতো গাঢ় হবে ততোই উপকারি। পরের দিন সকালে পানি টাকে ছেঁকে নিয়ে হালকা আঁচে গরম করে খালি পেটে খেয়ে নিন। এবং আধা ঘন্টা পর অন্যান্য খাবার খান। এতে অতি শীঘ্রই বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। এবং নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।