বৈজ্ঞানিক নাম (Ipomoea aquatica) এক ধরণের অর্ধ জলজ উষ্ণমণ্ডলীয় লতা যার পরিচিত নাম কলমি শাক। ইংরেজীতে বলা হয় water spinach,water morning glory, swampp cabbage গ্রাম বাংলায় এই লতা শাক হিসেবে বহুল প্রচলিত। কলমি শাক একধরণের আঁশজাতীয় শাক। এর দাম সস্তা, সহজলভ্য তবে খুবই খাদ্য উপাদান আর পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ শাক। গ্রাম বাংলায় ভর্তা কিংবা ভাজিতে ভাতে সাথে এই শাক খাওয়া হয়। এছাড়াও কলমি শাকের বড়া আর পাকোড়া ও বানানো হয়। কলমি শাক সাধারণত ক্রান্তীয় ও উপ ক্রান্তীয় এলাকাতেই বেশি জন্মায়।
আসুন জেনে নেই কলমি শাকের কিছু উপকারিতাঃ
১।ডিজিটাল এই যুগে আমরা মোবাইল ফোন নির্ভরশীল। আর এই মোবাইল রেডিয়েশনের জন্যে প্রধান রোগ হলো মাথা ব্যাথা ও অনিদ্রা। যাদের অনিদ্রা ও মাথা ব্যাথার সমস্যা আছে তারা চাইলে কলমি শাক খেতে পারেন।
২।কলমি শাকে রয়েছে পর্যাপ্ত রয়েছে খাদ্যশক্তি যা আমাদের শারীরিক দূর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। অসুস্থ রোগীদের বেশি করে কলমি শাক খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয় এতে রোগী তাড়াতাড়ি সেরে উঠতে পারে। এছাড়া দৃষ্টিশক্তি প্রখর করতে এই শাক বিশেষভাবে কাজ করে। যারা রাতকানা রোগী তারা এক সপ্তাহে নিয়মিত এক বেলা করে কলমি শাক বাজি করে খেতে পারেন। এতে উপকৃত হবেন।
৩।শরীরের যেকোনো অঙ্গ কিংবা হাত পায়ে জ্বালা পোড়া করলে একটু দুধের সাথে কলমি শাক মিশিয়ে এক সপ্তাহ সকালে খালি পেটে খেলে খুব শীঘ্রী ফলাফল পেয়ে যাবেন। এছাড়া প্রসাবের রাস্তায় জ্বালা পোড়া হলে অথবা যন্ত্রণা হলে কলমি শাক কে রস করে ৩ থেকে ৪চামচ ৩সপ্তাহ পর্যন্ত খেতে পারেন। ফলাফল পাবেন সাথে সাথে। আর মেয়েদের ঋতু চক্রের সময় বিভিন্ন শারীরবৃত্তিয় সমস্যা দেখা দেয়। কলমি শাক এই সকল সমস্যা সমাধানে ভালোভাবে কাজে করে।
৪।খাদ্য পরিপাক, হজম, ক্রিয়া বিক্রিয়া সকল কিছুতে কলমি শাকের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। কেননা কলমি শাক হলো আঁশ জাতীয় খাবার। এমনকি কলমি শাক নিয়মিত খেলে যাদের কোষ্টকাঠিন্যের সমস্যা আছে তাও দূরিভূত হয়ে যায়। তবে যাদের কোষ্টকাঠিন্য রয়েছে তারা একটি পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন বেশি পরিমাণ কলমি শাক নিয়ে ভালো করে ১পোয়া পরিমাণ রস করে সেখানে আখের গুর মিশিয়ে সকাল বিকাল খান। ভালো ফলাফল পাবেন।
৫।গর্ভাবস্থায় মায়েদের শরীরে পানি চলে আসে। শরীর অস্বাভাবিকভাবে ফুলে যায়। এ সময় ৩ সপ্তাহ ধরে রসুন দিয়ে কলমি শাক ভেজে খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়। আবার শিশু জন্ম নেয়ার পরে অনেক মায়ের বুকের দুধ আসেনা। এক্ষেত্রে কলমি শাক রান্না করে খাওয়ালে বুকে দুধ আসে। চাইলে ছোট মাছ দিয়ে কলমি শাক রান্না করবেন এতে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়, পুষ্টিগুণাগুণ ও বজায় থাকে।
৬।প্রতি ১০০গ্রাম কলমি শাকে কিছু নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্য উপাদান থাকে। সোডিয়াম থাকে ১১৩ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৩১২ মিলিগ্রাম, খাদ্যআঁশ ২.১ গ্রাম, প্রোটিন ৩গ্রাম, কার্বোহাইড্রেটস ৫.৪ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৭৩ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৫০ মিলিগ্রাম, লৌহ ২.৫ মিলিগ্রাম, জলীয় বাষ্প ৮৯.৭ মিলিগ্রাম। এইসকল খাদ্য উপাদানে ভরপুর হলো কলমি শাক।
৭।এছাড়া কলমি শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। যেটি হাড় ও দাঁতকে শক্ত মজবুত রাখতে সাহায্য করে এবং হাড়ের ক্ষয়রোধ করে। আরো রয়েছে ভিটামিন সি। অ্যান্টঅক্সিডেন্টস হিসেবে কাজ করে। এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া বসন্ত রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কলমি শাক ব্যবহার করা হয়।
৮।ক্ষতিকারক পোকা মাকড় যেমন পিঁপড়া, মৌমাছি, বিছা কামড়ালে আক্রান্ত স্থানে কলমি শাকের পাতা সহ ডগা নিয়ে রস করে আক্রান্ত স্থানে লাগাতে পারেন এতে যন্ত্রণা কমে আসে।
উপরোক্ত পদ্ধতিগুলোতে দেখা যায় কলম শাক শুধু শাক নয় পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ একটি খাবার। যা আমরা দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় রাখতে পারি। শুধু পাতাটি নয় এর ডগা ও বিভিন্ন ভাবে কাজ করে। তবে হ্যাঁ ইউরিক এসিডিটি ও কিডনি জনিত সমস্যা যাদের বেশি তারা এই শাক না খেলেও চলবে। অর্থাৎ পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়া উচিত।