বৈজ্ঞানিক নাম Lawsonia inermis যাকে বলা হয় মেহেদি। একে আবার ইংরেজীতে বলা হয় হেনা, আর আরবীতে হিন্না বলা হয়। সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে মেহেদি পাতার জুড়ি মেলা ভার। এই মেহেদী পাতা চুল, হাত, নখ, পশুড় চামড়া ইত্যাদি রঙিন করার কাজে ব্যবহার হয়ে আসছে। এটি একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ। তবে বর্তমানে এই মেহেদী পাতার সাথে আধা কৃত্রিম পদার্থ মিশিয়ে ও তৈরি করা হয় মেহেদি। মেহেদি পাতায় রয়েছে ঔষধি গুণাগুণ। চুলের সৌন্দর্য বর্ধনে মেহেদী পাতায় রয়েছে বিশেষ গুণ। তবে শুধু সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে নয় চুলের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে মেহেদি অয়াতা বিশেষ ভাবে কাজ করে। মেহেদি পাতা ব্যবহার করে পেতে পারি চুলের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান।
আসুন জেনে নিই মেহেদি পাতা ব্যবহার করে চুলের যত্ন নেয়ার পদ্ধতি।
১।এখন চুলের একটি বিশেষ সমস্যা হলো চুলে পেকে যাওয়া। আগে বয়স হলে এই সমস্যা দেখা দিতো। তবে এখন যেকোনো বয়সেই চুলের পেকে কিংবা সাদা অংশ দেখা দেয়। চুলের পুষ্টিগুণের অভাবের জন্যে এই সমস্যা হয়। এক্ষেত্রে মেহেদি পাতার একটি পেস্ট বিশেষভাবে কাজ করে। ১কাপ ফুটন্ত গরম পানিতে ২টেবিল চামচ আমলকীর গুড়ো দিয়ে ১চা চামচ রঙ চা ও ২টি লবঙ্গ নিবেন। এতে এবার পরিমাণ মতো মেহেদি পাতা বেটে একটি থকথকে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্ট টি চুলে ২ঘন্টা রেখে ২ঘন্টা পরে পানি দিয়ে মাথা ভালোভাবে ধুয়ে নিন। নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন এই পেস্ট। অতি সহজেই ঢেকে যাবে পাকা চুল।
২।চুলের রুক্ষতা আর চুলের আগা ফাটা এখন নিত্যদিনের সমস্যা। এতে চুলের সৌন্দর্য ও নষ্ট হয়ে যায়। ১কাপ বাটা মেহেদি পাতার সাথে ২/৩ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল এবং একটি ভিটামিন ই মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। ১ঘন্টা পরে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ১দিন করে এইভাবে চুলের যত্ন নিন। এতে চুলের আগা ফাটা আর রুক্ষতা দূর করে চুল হবে আকর্ষণীয়।
৩।চুল হলো আমাদের সৌন্দর্য বর্ধনের একটি বিশেষ অংশ। আর লম্বা ঘন কালো চুল তো সকলের পছন্দ। কিন্তু নিত্য দিনের কাজের ব্যস্ততায় চুলের যত্ন আর সেভাবে নেয়া হয় না। এতে চুলের ঘনত্ব সৌন্দর্য এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। আমরা যদি মেহেদি পাতা নিয়মিত ব্যবহার করি তাহোলে পেতে পারি ঘন কালো আর স্বাস্থ্যউজ্জ্বল চুল।
৪।চুলের খুশকি বর্তমানে এক ধরণের চুলের রোগ হিসেবে দেখা দিয়েছে। চুলের খুশকির ফলে অনেকে হীনমন্যতায় ভুগেন। এর ফলে চুল ঝড়ে যায়। চুলের আগা হয়ে যায় নরম। কিন্তু এতে মেহেদী পাতা দিবে দারুণ সমাধান। মেথিকে সারারাত ভিজিয়ে পরের দিন সকাল বেট নিবেন। পরিমান মতো সরিষার তেল গরম করে এতে মেহেদি পাতা দিন। তেল ঠান্ডা হলে অই মেথি বাটা দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। এবার এই পেস্ট মাথার ত্বকে অর্থাৎ চুলের গোড়ায় ভালোভাবে লাগান। ২ঘন্টা পরে চুল ভালোভাবে ধুয়ে নিন। চুল হবে খুশকি মুক্ত।
৫।মাসে অন্তত ২বার মেহেদি বাটা লাগান এতে চুলের সৌন্দর্য বাড়বে। সম্ভব হলে আরো ঘন ঘন মেহেদি বাটা দিন চুলে। চুলের গোড়া হবে শক্ত। চুল পড়া কমে চুলের রুক্ষতা ও কমিয়ে দেবে। চুল হবে স্বাস্থ্যজ্জ্বল ও সুন্দর। ফিরে পাবে হারিয়ে যাওয়া জৌলুশ। একটি বাটিতে পরিমাণ মতো আমলকীর পানি নিয়ে সেখানে মেহেদি পাতা ২ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন। এরপরে ওই মেহেদি পাতাকে বেটে পেস্ট তৈরি করে মাথার ত্বকে লাগান। চুলের সকল দূর্বলতা কমিয়ে দেবে।
৬।আগেই বলা হয়েছে মেহেদিতে আছে ভেষজ গুণ। এই ভেষজ গুণ চুলের বৃদ্ধি ও ঘন করবে। এছাড়া নিয়মিত মেহেদি পাতার বাটা ব্যবহার করলে চুলে শ্যাম্পুর প্রয়োজন পরেনা।
উপরোক্ত পদ্ধতিতে জানলাম কীভাবে মেহেদি পাতা দিয়ে চুলের যত্ন নেয়া যায়। তবে আগে খেয়াল রাখতে হবে যত্ন না করলে সুফল পাওয়া যাবেনা। তাই চুলের যত্ন ও নিতে হবে পাশাপাশি মেহেদি পাতাও ব্যবহার করতে হবে। তবেই পাবে চুলের সৌন্দর্যরূপ।