খেজুর ইংরেজীতে যাকে বলা হয় (Date Palm)। তবে খেজুরের একটি নির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক নাম ও রয়েছে ফিনিক্স ড্যাকটিলিফেরা (Phoenix dactylifera)। আমাদের মানব সভ্যতার ইতিহাসে সুমিষ্ট ফল হিসেবে স্বীকৃতপ্রাপ্ত হিসেবে রয়েছে খেজুর। খেজুর গাছের ফলকেই সাধারণত খেজুর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। খেজুর গাছ সাধারণত মরু এলাকায় জন্মায় বেশি।
খেজুর গাছ সাধারণ মাঝারি আকারের হয় এবং এর গড়উচ্চতা ১৫–২০ মিটার পর্যন্ত। খেজুর গাছের লম্বা পাতাকে পাখির পালকের আকৃতির সাথে তুলনা করা হয়েছে। আর পাতাগুলোর দৈর্ঘ্য ৩–৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। খেজুর অত্যন্ত সুস্বাদু ও বেশ পরিচিত একটি ফল। খেজুরে রয়েছে ফ্রুকটোজ ও গ্লাইসেমিক সমৃদ্ধ। এই উপাদান গুলো রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ায়।
খেজুর ফলকে মিষ্টান্ন হিসেবে চিনির বিপরীতে অধিক ব্যবহার করা হয়েছে। খেজুরে রয়েছে ভিটামিন বি। ভিটামিন বিসিক্স মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আর খেজুর শরীরের জন্যে শক্তির একটি বিরাট উৎস। খেজুর খেলে শরীরের ক্লান্তিভাব দূর হয়।
খেজুরের পুষ্টি উপাদানে দেখা যায় চারটি বা ৩০ গ্রাম পরিমাণ খেজুরে আছে ৯০ ক্যালোরি, ১গ্রাম প্রোটিন, ১৩ মি.লি. গ্রাম ক্যালসিয়াম, ২.৮ গ্রাম ফাইবার। এছাড়াও পাকা খেজুরে প্রায় ৮০% চিনিজাতীয় উপাদান রয়েছে। বাকি অংশে খনিজসমৃদ্ধ বোরন, কোবাল্ট, ফ্লুরিন, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, সেলেনিয়াম এবং জিঙ্কের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান রয়েছে। খেজুরে স্বল্প পরিমাণে পানি থাকে যা শুকানো অবস্থায় তেমন প্রভাব ফেলে না। কিন্তু এ প্রক্রিয়ার ফলে সঞ্চিত ভিটামিন ‘সি’ খাদ্য উপাদান নষ্ট হয়ে যায়।
এবার জেনে নেই খেজুর সম্পর্কে উপকারীতাঃ
১।যারা উচ্চ রক্তচাপের রোগী তারা চাইলে খাদ্যতালিকায় খেজুর রাখতে পারেন। খেজুরে থাকা সোডিয়াম এবং পটাশিয়াম রক্তের চাপকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং কোলেস্ট্রল কমায়। আর খেজুরে থাকা লিউটেন ও জিক্সাথিন রেটিনার স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে।
২।রক্তস্বল্পতা রোগীদের ক্ষেত্রে খেজুর অতি প্রয়োজনীয়। কেননা আমাদের শরীরে যে পরিমাণ আয়রন প্রয়োজন তার ১১ভাগ আসে খেজুর থেকে। খেজুরের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন, খনিজ, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম এবং আঁশের জোগানও। তাই ডায়েটে খেজুর রাখতে পারলে শরীরের প্রয়োজনীয় উপাদান সহজেই মেলে।
৩।খেজুরের মধ্যে প্রায় ৪০০ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম বিদ্যমান থাকে, যা মানুষের স্ট্রোক হওয়ার ভয়াবহতাকে ৪০% কমিয়ে দেয়।
৪।নিয়মিত খেজুর খেয়ে খুব সহজেই কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে আরাম পাওয়া যায়। তুলনামূলক শক্ত খেজুরকে পানিতে ভিজিয়ে (সারা রাত) সেই পানি খালি পেটে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। এতে কোনো প্বার্শপ্রতিক্রিয়া নেই।
৫।মুখের স্বাদ ও রুচি বাড়াতে খেজুরের কোনো তুলনা নেই। শিশুদের মধ্যে যারা ঠিকমতো খেতে চায় না, তাদেরকে নিয়মিত খেজুর খেতে দিলে মুখের রুচি ফিরে আসে। খেজুরের মধ্যে রয়েছে স্যলুবল এবং ইনস্যলুবল ফাইবার ও বিভিন্ন ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিড, যা সহজে খাবার হজমে সহায়তা করে।
৬।যাদের হার্টের সমস্যা রয়েছে সেক্ষেত্রে প্রতিদিন খেজুর খাওয়া জরুরি। গবেষণায় দেখা গেছে, পুরো রাত খেজুর পানিতে ভিজিয়ে সকালে পিষে খাওয়ার অভ্যাস করলে হার্টের রোগীর সুস্থতায় কাজ করে। এটি নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস করলে উপকৃত হওয়া যাবে।
৭।খেজুর শারীরিক ও মানসিক শক্তিবর্ধক হিসেবে কাজ করে। খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য উপাদান, যা শারীরিক ও মানসিক শক্তি বৃদ্ধিসহ হজম শক্তি, যৌনশক্তি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। খেজুর ফুলের পরাগরেণু বন্ধ্যাত্ব দূর করে, শুক্রাণু বৃদ্ধি করে। খেজুর ও খেজুরের ফুল পরাগরেণু ডিএনএ’র গুণগতমান বৃদ্ধি করে এবং অণ্ডকোষের শক্তি বাড়ায়।
৮।বর্তমানে প্রায় বেশিরভাগ লোকের ই ক্যান্সারের সমস্যা দেখা দেয়।খেজুর বিভিন্ন ক্যান্সার থেকে শরীরকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে খেজুর লাংস ও ক্যাভিটি ক্যান্সার থেকে শরীরকে দূরে রাখতে সাহায্য করে।
৯।শুকনো খেজুরের মাধ্যমে শরীরের দরকারি খনিজ উপাদান মেলে। ভিটামিনের চাহিদাও পূরণ হয়। মরু অঞ্চলের এ ফলের ঔষধিগুণ ও স্বাদ, দুই কারণেই এটি জনপ্রিয়।
১০।যারা নিয়মিত ডায়েট এ আছেন তারা প্রত্যেকদিন এর ডায়েট চার্ট এ খেজুর যোগ করে নিন। এতে করে খাদ্যের যোগান ও যথেষ্ট পরিমাণে হয়ে যাবে।
উপরোক্ত তথ্য থেকে দেখা যায়, খেজুর আমাদের শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে খুব ই উপকারী। তাই প্রত্যেহ খেজুর খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।