মলত্যাগের সময় রক্তপাত, চুলকানি, জ্বালাপোড়া, মলদ্বারে ব্যাথা, পায়ুপথের বাইরের দিকে ফোলা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিলে বুঝতে হবে পাইলস বা অর্শ রোগ হয়। এই রোগে মকদ্বারের বাইরে কিংবা ভিতোরে এছাড়া চারপাশে কয়েকটা গোলাকৃতি গুটাকে দেখা দেয়। এই গুটিকাগুলোকে আবার গেজ বলে। এটি একটি সাধারণ রোগ তবে এর সমাধান হয় দীর্ঘমেয়াদি। কিন্তু আমরা এখন বিভিন কবিরাজ, অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি কিংবা বিভিন্ন সাইনবোর্ডে দেখতে পায় পাইলস থেকে মুক্তি পাওয়ার গ্যারান্টি। যারা এই পথে পা বাড়াবেন তাদের সমস্যা আরো বেড়ে যাবে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ধীরে ধীরে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে অনেকে অবহেলা করে আবার চিকিৎসা করেন না। এটা ভুল। এক্ষেত্রে মলদ্বারে রক্ত বের হতে হতে একসময় আপনি ররক্তশূন্যতায় ভুগবেন। সাধারণত ৪৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সী মানুষের এই সমস্যা বেশি দেখা দেয়। তবে এখন আর নির্দিষ্ট কোনো বয়স মানে না। পাইলস হওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে যেমন পায়খানা করার সময় অতিরিক্ত চাপ দেয়া, গর্ভাবস্থা, দীর্ঘদিন কাশি,ডায়রিয়া ও কোষ্টকাঠিন্য,অতিরিক্ত ওজন। এই সমস্যা গুলোর কারণে পাইলস হতে পারে। তবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে পাইলস থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
আসুন জেনে নেই পাইলস থেকে মুক্তি পাওয়ার ঘরোয়া পদ্ধতিগুলো কিঃ
১।প্রথমত হলো বরফ। যখন পায়ুপথ কিংবা মলদ্বারের জায়গা টা ফুলে যায় সেখানে আমরা বরফ লাগাতে পারি। বরফ রক্ত চলাচল সহজ করে এবং ব্যাথা উপশমে খুব ভালো কাজ করে। এছাড়া কয়েকটুকরো বরফকে একটি কাপড়ে নিয়ে পেঁচিয়ে অন্তত ১০মিনিট সেই জায়গায় রাখুন। এভাবে দিনে কয়েকবার করুন। ঘরোয়া উপায়ে বরফ হলো অন্যতম।
২।যাদের কোষ্টকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে তাদের আগে এই সমস্যা থেকে সমাধান নিতে হবে। কোষ্টকাঠিন্যের জন্যে আপনি খাদ্য তালিকায় কলা রাখতে এটি চমৎকার কাজ করে। কলা খেলে আমাদের মলত্যাগের সময় কোনো চাপের প্রয়োজন হয়না। যার ফলে পাইলস হওয়ার সমস্যা থাকেনা। আর কলা যসি সোয়াবিনের দুধের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায় তাহোলে আরো দ্রুত ফলাফল পাওয়া যায়।
৩।শরীরে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে আমাদের নিয়মিত ব্যায়াম করআ উচিত। ব্যায়াম করলে ওজন ও হ্রাস পাবে। তাই বলে ভারী কাজ করে ব্যায়াম করা না। সাইকেলিং, দৌড়ানো, সাঁতার কাটার মতো ব্যায়ামগুলো বিশেশ ভাবে উপকার করবে। শুধু ওজন না কোষ্টকাঠিন্যের সমস্যা ক্ষেত্রে ব্যায়াম দারুণ কাজ করে।
৪।মলদ্বারে যদি অলিভ অয়লে ম্যাসাজ করা হয় তাহোলে ব্যাথা অনেক উপশম হয়। বিশেষভাবে টয়লেটে যাওয়ার আগে ব্যবহার করুন। এছাড়া চাইলে নিয়মিত ১চা চামচ করে অলিভ অয়েল খান। এতে শরীরের জ্বালাপোড়া ও কমবে। অর্শ রোগে ও খুব ভালোভাবে সাহায্য করবে।
৫।কাঁচা হলুদ ও আমাদের পাইলসের সমস্যায় সাহায্য করে। কাঁচা হলুদকে পানিতে ফুটিয়ে সেই পানি নিয়মিত খান।এটি পাইলসের সমস্যা সমাধানে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
৬।অনেক সময় ঠিকঠাক ভাবে টয়লেটে কমোডে বসার নিয়ম না জানার ফলে মলদ্বারে চাপ পরে। যারা উচু কমোড ব্যবহার করেন তারা পায়ের নিচে একটি টুল রাখবেন এবং সামনের দিকে ঝুঁকে বসে যাতে বৃহদন্ত্রে বেশি চাপ না পড়ে।
৭।খাদ্যতালিকার আমরা বিভিন্ন ডাল যেমন মসুর ডাল, তিসির ডাল, খেসারির ডাল খেতে পারি। এগুলা বিশেষভাবে উপকার করে। এছাড়া মূলাও বিশেষভাবে সাহায্য করে। মুলা সবজির রস অর্থাৎ যাকে বলা হয় র্যাডিশ জুস বিশেষভাবে সাহায্য করে। শুরু থেকে নিয়মিত ১ থেকে ৪কাপ খাবেন। পরে আস্তে আস্তে কমিয়ে ১ থেকে ২ কাপ খাবেন।
৮।অ্যালোভেরা গাছের পাতা ও এই পাইলসের সমস্যা সমাধানে বিশেষভাবে সাহায্য করে। অ্যাল্যভেরা গাছের জেল নিয়ে কিছু জেল একটি প্লাস্টিকের ছোট ব্যাগে রেখে ফ্রিজে রেখে দিন।এরপর ঠান্ডা হলে ক্ষত জায়গায় কিংবা ফোলা জায়গায় লাগাতে পারেন এতে ব্যাথা অনেকাংশে উপশম হয়।
৯।শুকনা ডুমুর কে সারারাত ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে ছেঁকে পানি খেতে পারেন। এছাড়া বেদানার দানাকে গরম পানিতে ফুটিয়ে নিন। দেখবেন রং বদলে যাবে। এই দুই জাতীয় পানি দিনে ২বার করএ পান করুন। বিশেষভাবে সাহায্য করবে।
১০।আমাদের যে রক্ত পড়ে কাঁচা পেঁয়াজ সেই কাজটা খুব ভালোভাবে করে। কাঁচা পেয়াজ খেলে রক্ত পড়াটা সমস্যাটা কিছুটা সমাধান হয়।
উপরোক্ত পদ্ধতিগুলো হলো ঘরোয়া পদ্ধতি। তবে খেয়াল রাখতে হবে তাড়াহুড়া নয় ধীরে ধীরে এই রোগের সমাধান হবে।