লিভার যার বাংলা শব্দ হলো যকৃৎ। সাধারণত মেরুদন্ডী ও অন্যান্য কিছু প্রানীর মধে এই লিভার থাকে। লিভার হলো প্রানীদেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ। তবে একে একদম চলতি ভাষায় কলিজা বলা হয়।
মানবদেহের সবচেয়ে বড় গ্রন্থি হলো লিভার। এই লিভার ২টি ভাগে বিভক্ত ডান লিভার ও বাম লিভার। লিভারের ওজন দেহের ওজনের ৩ থেকে ৫%। লিভার সাধারণত মানবদেহে বিপাকীয় ও অন্যান্য শারীরবৃত্তীয় কাজে করে।
শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। শরীরকে সুস্থ রাখতে হলে লিভারের যত্ন ও নিতে হবে। তবে বর্তমানে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার মধে লিভারের সমস্যা বেশি। সারাদিন বসে থাকা, বসে বসে খাওয়া, বাইরের জাংক ফুড খাওয়া ইত্যাদি থেকে আমাদের লিভারে চর্বির স্তর দিন দিন ভারী হচ্ছে। এতে সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
আসুন জেনে নিই লিভারের চর্বি হলে তা দূরিকরণে কি কি উপায় অবলম্বন করতে হবে ।
লিভারের ফ্যাট বা চর্বি কমানোর ঘরোয়া ১০ উপায়ঃ
১। নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলুনঃ
যারা ব্যায়াম করেন না তাদের ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। প্রত্যেকদিন ঘন্টা খানেক ধরে ঘাম ঝড়ার মতো করে ব্যায়াম করতে হবে। এছাড়া আপনি ভাইলে হাঁটতে ও পারেন। এতে শরীরের ওজন ও কমবে। লিভারের ও সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
দেশে প্রায় ১৮ থেকে ২০ ভাগ লোকেরা এই রোগে ভুগে। ইদানীং এই রোগের প্রভাব বেড়ে গিয়েছে। কেননা করোনা ভাইরাসে আমরা কেউ কোনো কাজে যেতে পারছিনা কোনো কাজ করতে পারছিনা। বাসায় বসে বসে ঘুম, খাওয়া এবং বসে থাকার ফলে এই রোগের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। তাই উচিত বাসায় যতটা সম্ভব কাজ করা এবং ব্যায়ামের ব্যবস্থা করে নিয়মিত ব্যায়াম করা।
২। নেশাযুক্ত দ্রব্য বর্জন করুনঃ
নেশাযুক্ত দ্রব্য বর্জন করতে হবে। যারা প্রত্যেকদিন নেশা করেন কিংবা নেশা না করলে হয় না। তাদের এইসকল অভ্যাস পরিহার করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রথমে মদ পান ত্যাগ করতে হবে।
৩। ফাস্টফুড জাতীয় খাবার বর্জন করুনঃ
ফাস্টফুড, কার্বোনেটেড ফুড, জাংক ফুড অর্থাৎ যেসকল খাবারে তেল চর্বির পরিমাণ বেশি সে সকল খাবার পরিহার করতে হবে। কোল্ড ড্রিংকস, চকোলেট ও বর্জন করতে হবে ।
৪। আঁশযুক্ত খাবার খানঃ
সাধারণত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে গেলে আগে আমাদের প্রাত্যাহিক জীবন যাপনের নিয়ম কানুন বদলানোর জন্যে বলা হয়ে থাকে। এতে দৈনন্দিন ব্যায়াম, আঁশযুক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন। শরীরের অতিরিক্ত ওজন ঝেড়ে ফেলুন। যদি ৫ থেকে ১০ শতাংশ ওজন কমানো যায় তাহোলে লিভারের চর্বি ও কমে যায়।
৫। সবুক শাক সবজি, ফলমূল খানঃ
সবুক শাক সবজি, ফলমূল ইত্যাদি খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন। যাতে পরিপাকে সহজ হয় এবং ওজন সঠিক রাখে। অতিরিক্ত ফ্যাট জাতীয় খাদ্য যেমন–ঘি, দুধ, মাখন, মাছের মাথা, পনির, মাছের ডিম, লাল মাংস ইত্যাদি মোটেও খাওয়া যাবেনা। একদম বর্জনীয়।
৬। মানসিক চাপমুক্ত থাকুনঃ
যখন নিজের ভিতরে চাপ থাকবে কিংবা মানসিক চাপে ভুগবেন যাকে আমরা বলি স্ট্রেস। আমরা অনেকে মনে করি কিছু একটা খেলে অর্থাৎ খাবার খেলে আমাদের স্ট্রেস কমে যাবে।
এই সিদ্ধান্ত একেবারে ভুল। বিশেষজ্ঞরা মতামত দেন স্ট্রেসের মধ্যে খাবার খেলে সেটি সঠিক ভাবে পরিপাক আর হজম হয়। এই হজম না হওয়া খাবারটি আপনার লিভারে চর্বি জমতে সাহায্য করে।
৭। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন করবেন নাঃ
ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া আমরা এই ওষুধ সেই ওষুধ খেলে লিভারের সমস্যা হয় । এসব থেকে দূরে থাকবেন। ভূলেও এইসবে পা বাড়াবেন না।লিভারের চর্বি কমানোর ঔষধলিভারের চর্বি কমানোর ঔষধ
এগুলা সেবন করবেন না। আবার অনেক সময় কোলেস্টেরল এর ওষুধ পেনকিলার এগুলা ও লিভারের ক্ষতি করে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কতোদিন খাবো তা নিয়মমাফিক খেতে হবে।
৮। পর্যাপ্ত কফি পান করুনঃ
আমরা শুনে থাকি কফি আমাদের শরীরে ক্ষতি করে থাকে। কিন্তু লিভার সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে কফি বিশেষভাবে সাহায্য করে। যারা নিয়মিত কফি খান তাদের লিভারের অসুখ হওয়া থেকে ১৪ শতাংশ কমে যায়। যার ফলে লিভারে চর্বি ও কমে যায়। তবে বেশি নয়, নিয়ম মেনে খেতে হবে।
৯। লো ফ্যাট জাতীয় খাবার গ্রহণঃ
শরীরের খাদু পুষ্টিগুণাগুণের মধ্যে ফ্যাটও প্রয়োজনীয়। তাই ফ্যাট একেবারে বাদ দিলে হবে না। কিছু লো ফ্যাট খাবার আছে আবার হ্যালদি ফ্যাট জাতীয় খাবার আছে যা খেলে ফ্যাট এর ঘাটতি পূরণ হবে। কিন্তু ফ্যাট জমে থাকবে না। এই খাদ্য গুলা আবার লিভারের ক্ষেত্রেও উপকারী।
উপরোক্ত তথ্যানুযায়ী জানতে পারলাম লিভার কি এর কাজ কি এবং লিভারের যত্ন কীভাব্র করব আর লিভারে চর্বি জমাট বাঁধলে কি করব। তাই এখন থেকে নিয়ম মেনে খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি ব্যায়াম ও করতে হবে। একটু যত্নবান হলে তবেই পাবো সুস্বাস্থ্য