সরিষা বীজ থেকে উৎপন্ন হওয়া তেল কে বলা হয় সরিষার তেল। আমরা রান্নার কাজে এমনকি শরীরের ত্বকের গুণাগুণ মান রাখতে এই তেল মালিশ করে থাকি। এই সরিষার তেলের ঝাঁঝের জন্যে এই তেলে রয়েছে বিশেষ গুণ।
অ্যালাইল আইসোথায়োসায়ানেট নামক সালফারযুক্ত যৌগের জন্যে এই ঝাঁঝ হয়ে থাকে। তবে এই সরিষার তেলকে যতক্ষন পানির সাথে মেশানো হয়না ততক্ষণ পর্যন্ত ঝাঁঝ হয়না। তবে কৃত্রিম ভাবেও এই তেল উৎপাদন করা হয় খাবারে সর্ষের তেলের গন্ধ পাওয়ার জন্যে।
আসুন জেনে নিই সরিষার তেল খাওয়ার উপকারিতা ও খাঁটি সরিষার তেল চেনার উপায়
আসল খাঁটি সরিষার তেল আমরা ২ভাবে নির্ণয় করতে পারি। ১. ঘরোয়া পদ্ধতি ২.ক্যামিক্যাল বা ল্যাব পদ্ধতি।
ঘরোয়া পদ্ধতিঃ
১।আমরা সরিষার তেলকে সুতি কাপড়ে দিলে দেখবো দাগ পড়বে না। যদি আসল সরিষার তেল হয়ে থাকে তবে অবশ্যই দাগ লাগবে না। কিন্তু যদি লাগ লেগে থাকে তাহোলে বুঝতে হবে এটি নকল সরিষার তেল।
২।আমরা জানি যদি আমরা সরিষার তেলে পানি না মেশাই তাহোলে তা ঝাঁঝালো গন্ধ দেবেনা। অর্থাৎ যে তেলে ঝাঁঝালো গন্ধ নেই সেই তেল আসল সরিষার তেল। আর যে তেলে তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধ রয়েছে সেটি আসল সরিষার তেল নয়।
ক্যামিক্যাল বা ল্যাব পদ্ধতিঃ
১।ক্যামিক্যাল পরীক্ষার ক্ষেত্রে আমরা একটি টেস্ট টিউবে অল্প সরিষার তেল নিবো এবং ৪ থেকে ৫ ফোঁটা নাইট্রিক এসিড যোগ করে মিশ্রণ তৈরি করে মিশ্রণটিকে ২ থেকে ৩মিনিট ভালোভাবে নাড়িয়ে গরম করে নিতে হবে। যদি মিশ্রণটি লাল রং এর হয়ে যায় তবে বুঝতে হবে এই তেলে ভেজাল রয়েছে।
২।আরেকটি পদ্ধতিতে আমরা নির্ণয় করবো সরিষার তেলে তুলার বিচি বিদ্যমান কি না। এক্ষেত্রে আমরা প্রথমে একটি টেস্টটিউবে ৩মিলি কার্বন ডি সাল্ফাইড, সামান্য পরিমাণ সালফার ও ৩মিলি amyl অ্যালকোহল নিয়ে টেস্টটিউবের মুখটি ভালোভাবে আটকাবো এবং স্প্রিট ল্যাম্প এর উপরে ৩মিনিট গরম করব। গরম করার সময় যদি লাল রং বিদ্যমান হয়ে যায় তবে বুঝতে হবে এতে তুলার বিচি বিদ্যমান আছে।
এখন আমরা জেনে নিবো সরিষার তেলের উপকারিতাঃ
১।যাদের মুখের কালচিটে দাগ রয়েছে কিংবা ব্রণ চলে যাওয়ার পরেও দাগ বিদ্যমান তারা একটি সরিষার তেল ল্যাক বানিয়ে ব্যবহার করতে পারবেন। এতে আপনি ২চামচ সরিষার তেল,১চামচ নারকেল তেল,২চামচ টক দই,১চামচ লেবুর রসের সংমিশ্রণে প্যাক বানিয়ে মুখে ব্যবহার করবেন। এতে মুখের উজ্জ্বলতা ও বাড়বে।
২।যাদের মাথার চুল পড়ে যায়, গোড়া নরম, নতুন চুল গজায় না তারা সরিষার তেল মাথার তালুতে ব্যবহার করতে পারেন। সরিষার তেলে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম যা নতুন চুল গজাতে ও চুল পড়া রোধে সাহায্য করে।
৩।খাবারের স্বাদ বাড়াতে সরিষার তেলের কোনো জুড়ি নেই। বিশেষভাবে ভর্তাজাতীয় খাবারে সরিষার তেল বেশি ব্যবহার করা হয়। এবং খাবারের স্বাদ বাড়াতে ও সরিষার তেল ব্যবহার করা হয়।
৪।যাদের হার্টের ও কোলেস্টেরল এর সমস্যা আছে তাদের বলা হয় ভোজ্যজাতীয় তেল অর্থাৎ সয়াবিন তেল পরিহার করতে। এতে রক্তে কোলেস্টেরল পরিমাণ বেড়ে যায়। এই পরিবর্তে অনেকে নারকেল তেল, জলাপাই তেল ইত্যাদি ব্যবহার করেন। তবে তারা চাইলে পরিমাণমতো সরিষার তেল ও ব্যবহার করতে পারেন। এতে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
৫।বাচ্চাদের যখন সর্দি কাশির সমস্যা হয় তখন অনেক সময় নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হয়। এসময় সরিষার তেল বুলে মালিশ করলে কফ অনেকটা হাল্কা হয়। ত্বকের কোনো জায়গা ছিঁড়ে যাওয়া কিংবা ফাঙ্গাল সমস্যা থাকলে সেই জায়গায় সরিষার তেল ব্যবহার করলে উপকৃত হওয়া যাবে। এছাড়া একটি বিশেষ কাজ হলো সরিষার তেলের ঝাঁঝ পোকামাকড় সহ্য করতে পারেনা। এই তেল ব্যবহার করলে এই সমস্যা থেকে ও মুক্তি পাওয়া যায়।
উপরোক্ত পদ্ধতি থেকে আমরা জানলাম কীভাবে সরিষার তেল চিনবো এবং কি কি কাজে ব্যবহার করবো। তবে যাই করি পরিমাণ মতো ব্যবহারের চেষ্টা করব।