সাধারণত বাংলা মাসে পৌষ মাঘ এই দুই মাসকে শীতকাল বলে। আর ইংরেজী হিসাব করলে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত সময়কালে শীতকাল থাকে। অর্থাৎ আবহাওয়া ও জলবায়ুর কিছু তারতম্যের কারণে এইভাবে ঋতু পরিবর্তন হয়ে থাকে। তবে বাংলাদেশ হলো নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুর দেশ। কিন্তু পৃথিবীতে অনেক দেশ রয়েছে যেগুলো বেশির ভাগ শীতপ্রধান।
অর্থাৎ শীতকালীন আবহাওয়া বিরাজ করে বেশি। এই সময় ত্বকের অনেক পরিবর্তন দেখা দেয়। পোষাকের মধ্যেও বিভিন্ন গরম আর উলের পোষাক পড়া হয়। যা শরীরের আদ্রতা ভাবকে সমান রাখতে সাহায্য করে। শীতের কারণে শরীরে আদ্রতা ভাব হারিয়ে যায়।
অনেক সময় আশেপাশের পরিবেশে ও বিভিন্ন পরিবর্তন আসে। এই সময় কম বেশি সকলে ত্বকের যত্ন বেশি নিয়ে থাকেন। শরীরের ত্বকে ঠিক রাখার জন্যে অনেক নামি দামী প্রসাধনী ও ব্যবহার করেন।
তবে আসুন জেনে নেই…
শীতকালে ত্বকের যত্ন নেয়ার কিছু উপায় বা নিয়মঃ
১। নিয়মিত পানি ঝাপ্টা
অনেকের ত্বক আছে বেশি শুষ্ক। অর্থাৎ দেখা যায় অনেকের মুখের ত্বক ফেটে যায়। এ সময় ত্বকের আদ্রতা ভাব হারিয়ে ফেলে। আমরা বিভিন্ন ধরণের লোশন ক্রিম ব্যবহার করি এই আদ্রতা ধরে রাখার জন্যে। তবে অনেক সময় ক্রিম লোশনের পাশাপাশি চেষ্টা করবেন কয়েকবার পানি ঝাঁপটা দিতে।
তাহোলে মুখের আদ্রতা ভাব কিছুটা কমে আসবে। তবে হ্যাঁ যাদের তৈলাক্ত ত্বক তারা শীতকালে এই ঝামেলাতে থাকেনা। তাদের ত্বকের আদ্রতার মান ঠিক থাকে। তবে এই সময় মুখের তেল আরো বেড়ে যায়। তাই পানি ঝাপ্টা দিতে পারেন।
২। চুলের যত্নঃ
শীতকালে কেবল মুখের ত্বকের যত্ন নিলে হবে না চুলের যত্ন ও করতে হবে। শীতকালে খেয়াল রাখবেন ভেজা চুলে বাইরে না যেতে। এতে করে চুলের মধ্যে যে আদ্রতা গুণাগুণ রয়েছে তা চলে যাবে। এবং চুল ভাঙার পরিমাণ বেড়ে যাবে। আবার হ্যাঁ চুল বেঁধে ও রাখবেন না। এতে চুলের বিভিন্ন সমস্যার পড়তে পারেন। এই সময় খুশকি ও বেশি হয়। তাই গোসলের সময় চুল ভালোভাবে পরিষ্কার করে রাখবেন। যাতে চুলে কোনো জীবাণু জমাট বাঁধতে না পারে। আর যদি খোলা চুলে বের হতে চান চুলে হ্যাট ব্যবহার করুন। বেশি টাইট করেনা।আলতোভাবে হ্যাট পড়ুন। এতে চুলের আদ্রতা বজায় থাকবে।
৩।লোশন ব্যবহারঃ
ত্বকের পরিচর্যা করার জন্যে এই সময় অনেক লোশন ব্যবহার করা হয়। আর অনেক ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করা হয়। খেয়াল রাখবেন গোসলের পর কিংবা হাত মুখ ধোয়ার পরে এই লোশন বা ময়শ্চারাইজার লাগাবেন। অর্থাৎ বেজা অবস্থায়। এই সময় ত্বকের আদ্রতা ভাব বজায় থাকে। আর কোথাও বেরোতে হলে কিংবা ভারী মেকাপ করতে চাইলে যারা লিকুইড ফাউন্ডেশন ব্যবহার করতেন তারা সেই পরিবর্তে ক্রিম ফাউন্ডেশন ব্যবহার করুন।
৪।অলিভ অয়েল আর সাথে মধুঃ
শীতকালে ঠোঁট ফাটে বেশি। সাথে পায়ের গোড়ালি ও। এগুলা ত্বকের আদ্রতা ভাব হারিয়ে ফেলে তাই রুক্ষতা ভাব ও বেশি দেখা দেয়। ঠোঁটের যত্নে লিপবাম, লিপ জেল ব্যবহার করুন। এছাড়া কখনো জিব দিয়ে ঠোঁট ভেজাবেন না। ঠোঁটে পারলে কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল আর সাথে মধু মিশিয়ে লাগিয়ে রাখুন। ঠোঁট ফাটা সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। আর ঠোঁটের আদ্রতা ভাব থেকে মুক্তি পাবেন। পায়ের গোড়ালিতেও অলিভ অয়েল দিয়ে ম্যাসাজ করতে পারেন। এতে পায়ের গোড়ালি ফাঁটা থেকে মুক্তি পাবেন। ত্বকে রুক্ষতা ভাব গিয়ে আদ্রতা ভাব ফিরে আসবে।
৫।গরম পানি এড়িয়ে চলাঃ
শীতকালে অনেকের বেশি অভ্যাস গরম পানি খাওয়া। গরম পানি দিয়ে গোসল, হাত মুখ ধোয়া ইত্যাদি সব কাজ করে থাকেন। তবে অতিরিক্ত গরম পানি আমাদের ত্বকের জন্যে ক্ষতিকর।
অতিরিক্ত গরম পানির ফলে ত্বকের ফলিকলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়। গোসলের সময় গোসলের পানিতে বাদাম তেল কিংবা জোজবা তেল দিয়ে গোসল করুন। এই তেল আপনার ত্বককে আদ্র রেখে মসৃণ করে রাখবে।
আমরা যারা ত্বকের যত্নে উদাসীন তাদের অন্তত শীতকালে ত্বক নিয়ে যত্নবান হয়ে হবে। কেননা ত্বকের আদ্রতা ভাব যদি ধীরে ধীরে কমে যায় তাহোলে ত্বকে একসময় রুক্ষতায় ফেটে যাবে। তাই অন্তত শীতকালে আমাদের ত্বকের যত্ন নিতে হবে। হাত, পা, চুল, শরীর, ঠোঁট, মুখের ত্বক সবকিছুর ই সঠিক যত্ন নিতে হবে।