রান্নাঘরে আমরা নিত্য এমন অনেক জিনিস ব্যবহার করি যেগুলাে প্রসাধনের উপাদান হিসাবে আমরা কাজে লাগাতে পারি। যেমন—ডিম, আলু, শশা, লবণ, মধু, চা পাতা, দই ও কিছু কিছু সবজি।
এ গুলো ব্যবহার করেই আমরা ত্বকের যত্ন নিয়ে ত্বককে ফর্সা করে নিতে পারব। চলুন আমরা রান্নাঘরের এমন কিছু উপাদান দেখে নিই যা দিয়ে ত্বকের যত্ন নিতে পারব ।
রান্নাঘরের প্রসাধন যে সকল উপাদান দিয়ে ত্বককে ফর্সা করে যাবেঃ
মধু :
প্রাকৃতিক উপাদানগুলাের মধ্যে মধু একটি আর্ত কমনীয় পদার্থ । মধু যদি সরাসরি ত্বকে লাগানো যায় তাহলেও রেশমের মতাে উজ্জ্বলতা প্রদান করে। যাদের ত্বক একটু তেলতেলে তারা মধুর সঙ্গে ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে নিয়ে (খুৰ ভালাে করে ঘুটে নিতে হবে) লেপন করলে ত্বক মসৃণ ও কোমল হয়। যাদের ত্বক একটু শুষ্ক ধরনের তারা ডিমের বদলে দুধ মিশিয়ে নিতে পারেন।
মধুর আরও একটি উপকারিতা হলাে (অবশ্যই এখানে শুধু প্রসাধন প্রসঙ্গেই বলা হচ্ছে, নইলে ঘরােয়া চিকিৎসায় মধুর বহুল ব্যবহার আজও প্রচলিত) মধু ক্লান্তি নাশ করতে পারে, অদ্রিা নিবারণ করে। গােসলের সময় পানির মধ্যে এক চামচ মধু দিয়ে গােসল করতে হবে।
আলু :
ত্বকের অবাঞ্ছিত দাগ মেটাতে আলু ব্যবহার করা যেতে পারে। আলু চাকা করে কেটে দু’চোখে রাখলে চোখ ঠাণ্ডা হয়, রােদ লাগা জনিত জ্বালা নিবারণ হয়। অনেকে বলেন আলু নাকি একজিমাতেও ভালাে কাজ দেয়। আলুকে ভালো করে থেঁতাে করে তার রস বের করে নিয়ে ত্বকে লাগালে খুব উপকার পাওয়া যায়।
আলু চাকা করে কেটে ত্বক মুছতে বা ত্বকের ময়লা পরিষ্কার করতে ব্যবহার করা যায়। ত্বকের টান-টান ভাব বজায় রাখতে বা চোখের পাশে ফোলা দূর করতেও আলু ব্যবহার করা যেতে পারে । আলু কেটে অথবা আলু থেঁতাে করে আই প্যাডের মতাে ব্যবহার করা যায়।
দই :
দই এর উপকারিতা সম্পর্কে কম বেশি আমরা সকলেই জানি। এতে নানা ধরনের এনজাইম থাকে। তাছাড়া দই খুব ভালাে ত্বকশােধক। দই মুখ ও করােটিকে সুস্থ রাখতেও সাহায্য করে। মুখ ধােওয়ার পর মুখে ঘষে মিনিট কুড়ি পরে হালকা গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন।
এটি বিশেষ করে যাদের তৈলাক্ত ত্বক ও দাগ বা ছােপ যুক্ত ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। শ্যাম্পু ব্যবহার করার আগে মাথায় দই ব্যবহার করতে পারেন। মাথার ত্বককে সুস্থ রাখে চুলের গােড়ায় পুষ্টি যােগায়।
ডিম :
ডিমের সফল প্রয়ােগেও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা যায় । ডিমকে ভালাে করে ফেঁটিয়ে নিয়ে মুখে, ঘাড়ে ও গর্দানে প্রলেপের মতাে লাগান। ২০-২৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। ডিমের ব্যবহারে ত্বকে টান ভাব আসে। ত্বক পুষ্ট হয় সারাদিনের ক্লান্তির পর মুখে ডিমের প্রলেপ দিলে বেশ চকচকে ও ঝরঝরে লাগে।
তাছাড়া ডিমের সাদা অংশ খুব ভালাে শুদ্ধিকারক। শ্যাম্পু করার আধ ঘন্টা আগে পর্যন্ত ডিমের এই সাদা অংশ মাথায় লাগাতে পারেন। এতে চুল আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। এছাড়া গােসলের আগে একটা ডিম এবং এক চামচ ব্রাণ্ডি মিশিয়ে চুলে লাগান এতে চুলের উজ্জ্বলতা বাড়বে।
শশা :
শশার রস বা শশার গােল গােল ফালি চোখের ওপর প্যাডের মতাে ব্যবহার প্রচলিত বিধি । শশার মধ্যে ত্বককে শুদ্ধ করার এবং শীতলতা প্রদান করার আশ্চর্য ক্ষমতা আছে। শশা থেঁতাে করে বা বেটে দুধের সঙ্গে মিশিয়ে মুখে মাখা যায়। এতে মুখ তরতাজা লাগে এবং ত্বকের পক্ষেও এটি বেশ পুষ্টিকারক ও পুষ্টিবর্ধক। যাদের ত্বক তেলতেলে তারা শশার ফালি নিয়ে গায়ে রগড়াতে পারেন। সারাদিন রৌদ্র ও গরমে কাজকর্ম করার পর এভাবে গায়ে শশা রগড়ালে শরীর শান্ত ও স্নিগ্ধ হয় ।
লবণ :
লবণ মিশানাে হালকা গরম পানি দিয়ে চোখ ধুলে চোখের ঔজ্জ্বলতা বাড়ে। এতে চোখের ফোলাও কমে যায় লবণপানি অন্যভাবেও ব্যবহার করা যায়। লবণ মিশানাে পানিতে তুলাে ভিজিয়ে চোখের ওপর প্যাডের মতাে রাখুন। এতে পানিতে ১ চামচ পরিমাণ লবণ লাগে। আবার পানিতে ৩-৪ চামচ লবণ দিয়ে সেই পানিতে পা ধুলে বা পা ডুবিয়ে রাখলে ক্লান্তি দূর হয়। পানি হালকা গরম করে নেবেন।
পেপে :
পেপের মধ্যে কিছু এনজাইম থাকে যে তাতে মৃত কোষ সমূহকে মোলায়েম ও পরিষ্কার করতে খুঁৰ সহায়ক হয়। পোপ। ঘেঁতাে করে মুখে প্রলেপের মতাে ব্যবহার। করুন। মনে রাখবেন পেপে যে কোনাে ধরনের। ত্বকের জন্য খুব কার্যকরী ও ফলপ্রদ।
বাঁধাকপি :
এতে অন্যান্য সুজির তুলনায় অধিক মাত্রায় মূল্যবান খনিজ পদার্থ থাকে। বাঁধাকপি পানিতে সেদ্ধ করে ঐ পানি ঠাণ্ডা করে মুখ ধুলে এভৃত উপকার পাওয়া যায়। ত্বকের পক্ষে এটি
কমলা :
কমলার খােসা এক জায়গায় করে শুকিয়ে গুঁড়াে করে নিন। এই চূর্ণ মুখের কোনাে প্রলেপের মধ্যে মিশিয়ে ব্যবহার করুন। এতে ত্বকে প্রাণ ফিরে আসে। তুক হয়ে ওঠে ঝকঝকে ও মােলায়েম।
রেড়ির তেল :
রেড়ির বা এরণ্ডের তেল ব্যবহারেও ত্বক সুন্দর হয়। রাতে শােওয়ার আগে এই তেল মাথায় মেখে নিন এবং সকালে উঠে ধুয়ে পরিষ্কার করে ফেলুন। এই তেল হলাে কোলস্টেরলরহিত। চুলের পক্ষে এই তেল খুবই পুষ্টিকর। এই তেল চুলের জন্য অন্য ভাবেও ব্যবহার করতে পারেন। তেল মাথায় মাখার পর একটা তােয়ালে গরম পানিতে ভিজিয়ে নিংড়ে নিয়ে কিছু সময় মাথায় বেঁধে রাখুন। এই পদ্ধতিতে তেল মাথার ত্বকের ভেতর সহজেই প্রবেশ করতে পারে। এই তেল চেযর পলক ঘন ও কালাে করার জন্যও ব্যবহার করা হয়।
চা পাতা :
চাপাতা পানিতে ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে নিন। ঐ পানিতে তুলাে ভিজিয়ে চোখে লাগালে ক্লান্ত- অবসন্ন চোখে চমক আসে। সেদ্ধ চা পাতাগুলাে না। ফেলে রেখে দিন। শ্যাম্পু করার পর শেষবার মাথা ধােওয়ার জন্য এই চা পাতাগুলাে খুব করে ফোটানাে পানিতে ধুয়ে ফেলুন। এতে চুল উজ্জ্বল হয়। সৌন্দর্য প্রসাধনের ক্ষেত্রে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে সবিশেষ খেয়াল রাখতে হয়। হাত পরিষ্কার রাখতে হয়।