ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার একটি স্থায়ী উদ্ভিদ হলো এলাচ বা এলাচি। এটি আদা জাতীয় উদ্ভিদ। এলাচ হলো জিনজিবায়ের পরিবারের এলিটারিয়া এবং আমোমাম গণের বিভিন্ন গাছ থেকে উৎপাদিত একটি মশলা। এলাচ হলো ছোট বীজ গুট দ্বারা স্বীকৃত।
টাকু আকৃতির ত্রিভুজ্রাকৃতি এবং ক্রস বিভাগে একটি পাতলা পাপড়ির মতো বহিস্থাবরণের মধ্যে ছোট ও কালো বীজ। এলাচের ব্যবহার ভারতীয় আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে আছে।
এলাচ হলো বিশ্বে তৃতীয়তম ব্যয়বহুল মশলা। যা ভ্যানিলা ও জাফরানের ওজনমূল্যে পিছিয়ে রয়েছে। এলাচ সাধারণত ২প্রকার হয়ে থাকে। বড় এলাচ, ছোট এলাচ।
আসুন জেনে নিই এলাচের গুণাগুণ ও উপকারিতাঃ
১। চুলের যত্নে এলাচঃ
চুলের যত্নে এলাচের ভূমিকা অনেক। মাথার ত্বক যদি পরিষ্কার হয় তাহোলে চুলের গোড়া থাকে মজবুত ও চুল পড়ার সমস্যা ও থাকেনা। এলাচের মধ্যে থাকা পুষ্টিকর গুণাগুণ চুলের গোড়াকে মজবুত করে চুলকে করে আকর্ষনীয় ও লম্বা। এলাচে থাকে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান আর অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস।
মাথার ত্বকে ইনফেকশন হলে দ্রুত সারিয়ে দেয়। এলাচ মাথার ত্বক ভালো রাখে এবং এলাচ চুলের ফলিকলগুলো মজবুত করে। এলাচের ভেজানো পানি দিয়ে চুল ধোয়ার পরে শ্যাম্পু করলে চুলে চমৎকার কাজ করে।
২।ঠোঁটের যত্নে এলাচঃ
এলাচ ঠোঁটের ক্ষেত্রে ও দারুণ ভূমিকা রাখে। এলাচের গুড়া, অলিভ অয়েল ও এলোভেরা জেল একসাথে মিশিয়ে ঠোঁঠে ১৫ মিনিট রেখে এরপরে ঠোঁঠ ধুয়ে ফেলুন।
এরকম নিয়মিত করলে ঠোঁঠ ফিরে পাবে গোলাপী রঙ। এছাড়া ঠোঁঠের জন্যে তৈরি লিপ বাম, গ্লস, তেল ইত্যাদিতে এলাচ ব্যবহার করে হয়। এলাচের ব্যবহারের ফলে ঠোঁঠে ফুটে উঠে কোমলীয়তার ভাব।
৩। এলার্জি দূর করেঃ
এখনকার সময়ে ত্বকে এলার্জি অন্যান্য সমস্যার মতো একটি সমস্যা। এলাচ যেহেতু এন্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদানে ভরপুর। এটি খুভ ভালো অ্যান্টিসেপটিক ও অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি। যা ত্বককে ঠান্ডা রাখে, ও করে তোলে মোলায়েম। তাই এলাচ ত্বকের জন্যে একটি ওষুধ হিসেবে কাজ করে।
মধু ও কালো এলাচ মিশিয়ে এলার্জি আক্রান্ত জায়াগায় লাগালে খুব তাড়াতাড়ি ফল পাওয়া যায়। শুধু ত্বক এলার্জি না ব্রণ ও কালো দাগে এই প্যাক ব্যবহার করত্ব পারবে। এছাড়া ত্বকের ফর্সাভাব আর উজ্জ্বল্যের জন্যে দারুণ কাজ করে।
৪।মন ও শরীরকে সতেজ রাখেঃ
আমরা যেকোনো সময় হতাশ হয়ে পরি বা যেকোনো কাজ নিয়ে বেশি চিন্তিত হয়ে পড়ি। যার ফলে ডিপ্রেশন অর্থাৎ মানসিক অস্থিরতা বেশি দেখা দেয়।
এসময় রং চায়ের মধ্যে যদি কয়েক্টা এলাচ দয়ে চা খাওয়া যায় তবে তা মন ও শরীরকে সতেজ করে তোলে। আর মস্তিষ্কে এক ধরণের আরামদায়ক অনুভূতি দেয়। এবং এলাচ আমাদের স্মৃতিশক্তি ও প্রখর করে তুলে। এক্ষেত্রে দুধের সাথে ২টি এলাচ ফুটিয়ে পান করুন। ফলাফল অবশ্যই পাবেন।
৫। মুখের দুর্গন্ধ দূর করেঃ
মুখের দুর্গন্ধ সবচেয়ে বিশ্রি একটা বিষয়। এর ফলে অনেক সময় কথা বলতে লজ্জা লাগে অথবা মুখ ডেকে কথা বলতে হয়। এলাচের ঝাঁঝালো স্বাস নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ রোধ করে মুখে দেয় তরতাজা ভাব।
এছাড়া এলাচের অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান দাঁতের মাড়ি ও দাঁতের বিভিন্ন উপকার করে থাকে।
৬।যৌন ইচ্ছা বাড়ায়ঃ
এলাচের মধ্যে যেহেতু বিভিন্ন খাদ্যউপাদান রয়েছে ফলে সেটি স্নায়ুকে শান্ত রাখে আর যৌন ইচ্ছাকে বাড়িয়ে দেয়।
এছাড়া অনেকে আছে বন্ধ্যাত্ব সমস্যায় আছেন। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতেও এলাচ সহায়তা করে।
৭। ঔষধীয় কাজে ব্যবহারঃ
এলাচ খাবারে, পানীয় স্বাদে, রান্নাতে মশলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তবে যেটি ছোট এলাচ রয়েছে সেটি ঔষধীয় কাজে ব্যবহার করা হয়।
৮। শ্বাসকষ্টের সমস্যা দূর করেঃ
যাদের ব্রংকাইটিস কিংবা শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে তারা প্রতিদি এলাচ খেতে পারেন । এটি শ্বাসকষ্টের সমস্যা দূর করে । এছাড়া সর্দি, কাশি, ফুসফুসের সমস্যা, রক্ত সঞ্চালন ইত্যাদি সমস্যা থেকে মুক্তি দেয় এই এলাচ।
৯। হজম শক্তি বাড়ায়ঃ
হজম শক্তিতে এলাচ বিশেষ ভূমিকা রাখে। শরীরে খাবার হজম করে বিপাকের ব্যাধি থেকে মুক্তি দেয়। এর ফলে যকৃৎ ও অগ্ন্যাশয় উন্নত থাকে।
এই হজমের কারণে অএট ফাঁপা, বুক জ্বালাপোড়া, গ্যাস অম্বল, পেট খারাপ ইত্যাদি সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
এলাচের পুষ্টিগুণঃ
এলাচে যেসকল খাদ্য পুষ্টিগুণ রয়েছে তা হলো– কোলেস্টেরল, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ক্যালরি, নিয়াসিন, ফাইবার, ফ্যাট, পাইরিডক্সিন, থিয়ামিন, রাইভোফ্ল্যাভিন, ইলেকট্রোলাইট, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, কপার, আয়রন, জিংক, ফসফরাস, ভিটামিন এ ও সি ইত্যাদি। এই এক একটি খাদ্য উপাদান আলাদা আলাদা কাজ করে।
উপরোক্ত পদ্ধতিতে আমরা এলাচের ব্যবহার এবং কি কি কাজে ব্যবহৃত হয় তা জানলাম। এছাড়া আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এলাচ যেভাবে ভূমিকা রাখছে তা সম্পর্কেও জানতে পারলাম। এলাচের সঠিক ব্যবহার আমাদের করে তুলবে রোগমুক্ত সুস্থ ও সাবলীল। তাই নিয়ম মেনে এলাচ ব্যবহার করতে হবে।