বৈজ্ঞানিক নাম উইথানিয়া সোমনিফেরা (এল) ডুনাল কে বলা হয় অশ্বগন্ধা। আয়ুর্বেদে বলা হয় বলদা ও বাজিকরি। এই গাছের পাতা গুলোকে যখন পানিতে সিদ্ধ করা হয় তখন অয়ানি গুলো থেকে ঘোড়ার মূত্রের মতো গন্ধ বের হয়, তাই একে অশ্বগন্ধা বলা হয়। তবে এই পাতার মাধ্যমে কোনো রোগ ছড়ায় না। এই অশ্বগন্ধা গাছ সাধারণত দুই থেকে আড়াইহাত লম্বা হয়ে থাকে এবং অনেক শাখা থাকে। এই গাছের ফল ছোট ছোট মকরের মতো হয় এবং পেকে গেলে কমলার মতো কিছুটা লালচে হয়। এই গাছের ফুল গুলো সবুজ রঙের ছোট আকৃতির ঘণ্টার মতো হয়। এই গাছের পাতা আয়ুর্বেদ চিকিৎসাশাস্ত্রে ব্যবহৃত হয়। এই গাছের রস শক্তিবর্ধক হিসেবে কাজ করে।এই অশ্বগন্ধার গাছের মূল,ফুল,ফল,ডাল,ছাল সবই ঔষধীয় কাজে ব্যবহৃত হয়। তাই একে ভেষজ গাছ বলা হয়।
আসুন জেনে নিই অশ্বগন্ধা গাছের উপকারিতার দিকগুলো
১।যাদের চুল পড়ে যায়, পেকে যায় অর্থাৎ অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মান কমে যায় তারা অশ্বগন্ধা ব্যবহার করতে পারেন। অশ্বগন্ধা ব্যবহার করলে চুল পড়া রোধ হয়, চুলের পেকে যাওয়া ও কমে যায়। এতে চুলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর মাত্রা ও বেড়ে যায়।
২।মেয়েদের যখন ঋতুস্রাব হয় তখন মেয়েরা বিভিন্ন মানসিক চাপে থাকে, দুশ্চিন্তা বেড়ে যায়, তল পেটে তীব্র ব্যাথা অনুভব হয়। এই অশ্বগন্ধা মানসিক চাপ কমায়, দুশ্চিন্তা কমায় এবং তল পেটের ব্যাথা কমিয়ে ঋতুস্রাবে ধারুণ কাজ করে।
৩।অশ্বগন্ধার পাউডার ভারতীয় ঔষুধ হিসেবে কাজ করে। অশ্বগন্ধার পাতা দুধ ও ঘিয়ের সাথে ফুটিয়ে খেলে শরীরে বল পাওয়া যায়। যাদের অনিদ্রার সমস্যা আছে তারা অশ্বগন্ধার ওষুধ সেবন করলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
৪।বিশেষভাবে পর্যবেক্ষন করে পাওয়া গেছে, যেখানে সাপ কামড়ায় সেখানে যদি অশ্বগন্ধার প্রলেপ দেয়া হয় তাহোলে সাপের বিষ অন্যত্র ছড়ায় না এবং বিষ প্রশমিত হয়। তাই অশ্বগন্ধাকে সাপের বিষনাশক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
৫।অশ্বগন্ধা পুরুষ ও নারীদের যৌন সমস্যা সমাধানে বিশেষভাবে কাজ করে। নারী পুরুষের যৌনক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তবে পুরুষদের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে কাজ করে। পুরুষদের প্রজনন ক্ষমতা ও বৃদ্ধি করে। শুধু প্রজনন না শুক্রাণু ও টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধিতে ও অশ্বগন্ধা খুবই উপকারী।
৬।অশ্বগন্ধা শরীরে স্ট্রেস হরমোন কমায়। বৃক্কের উপর চাপ ও কমায়। মনকে শান্ত করে এবং বিভিন্ন মানসিক চাপ থেকে দূরে রাখে যা স্নায়বিক ভাবে আমাদের বিভিন্ন ঝুঁকি থেকে রক্ষা করে। এর ফলে মাথা ঠান্ডা থাকে আর আমাদের ভালো ঘুম ও হয়।
৭।অশ্বগন্ধা হার্টের খুব উপকার করে। অশ্বগন্ধা হার্টের পেশিকে শক্তিশালী করে কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় এবং রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে না। রক্ত জমাট না বাঁধলে আমাদের শরীরের কোলেস্টেরল এর সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।
৮।যারা ডায়াবেটিস রোগী অথবা যাদের উচ্চ মাত্রার শক্তিশালী ডায়াবেটিস রয়েছে তারা চাইলে অশ্বগন্ধা সেবন করতে পারেন। কেনন অশ্বগন্ধার অ্যান্টিডায়াবিটিস আমাদের ডায়াবেটিস এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে দেয়।
৯।অশ্বগন্ধার গুরা সর্দি কাশি এমনকি চোখের ব্যাথা দূর করতে বিশেষভাবে কাজ করে। পেটের বদহজম, পেট ফাঁপা, হজম শক্তি বাড়ানো এবং যকৃতের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে অশ্বগন্ধার বিশেষ উপকার করে।
১০।পূর্বেই জেনেছি অশ্বগন্ধা আদিকাল থেকে আয়ুর্বেদে ঔষধ হিসেবে কাজ করে। বিভিন্ন আয়ুর্বেদে এই অশ্বগন্ধা ব্যবহার করা হয়। অশ্বগন্ধার সাথে অন্যান্য উপকরণ দিয়ে ভেষজ ঔষুধ তৈরি করা হয়।
উপরোক্ত পদ্ধতিগুলোতে দেখা যায়, অশ্বগন্ধা আমাদের শরীরে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করে থাকে। এবং বিভিন্ন ঔষধি পুষ্টিগুণ সরবরাহ করে। তবে যারা প্রেস্কিপশন নিয়মে ঔষধ সেবন করেন তাদের উচিত ডাক্তারের পরামর্শে নিয়ম মেনে অশ্বগন্ধা ব্যবহার করা, যাতে শরীরের কোনো ক্ষতি না হয়।